শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫ - ০৯:২৬
গাজা সংকটে ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর নীরবতা একটি লজ্জাজনক কলঙ্ক: আয়াতুল্লাহ আরাকি

গাজার চলমান মানবিক বিপর্যয় ও ১২ দিনের যুদ্ধে শাহাদতপ্রাপ্ত "শহীদানে ভিলায়াত"-এর চল্লিশা উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় আয়াতুল্লাহ মোহসেন আরাকি ইসলামি দেশগুলোর নিরব ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাফল্যে "ঈশ্বরীয় অভিভাবকত্ব" এর মূল ভূমিকা তুলে ধরেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের ইসলামি বিশেষজ্ঞ পরিষদ ও হাওজার সর্বোচ্চ পরিষদের সদস্য আয়াতুল্লাহ আরাকি বলেন, “আমাদের বিজয়ের রহস্য, আমাদের অস্তিত্ব এবং ইসলামের স্থায়িত্ব নিহিত রয়েছে আল্লাহর অভিভাবকত্বে — যা নবী করিম (সা.), আহলুল বাইত (আ.) এবং আমাদের যুগে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।”

ইরান বিশ্ব অহংকারের বিরুদ্ধে ইসলামের পতাকাবাহী
বিশ্বজুড়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে ইরানের ভূমিকা তুলে ধরে আয়াতুল্লাহ আরাকি কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করেন: “আল্লাহ এমন এক জাতিকে আনয়ন করবেন যাদের তিনি ভালোবাসেন এবং যারা তাঁকে ভালোবাসে... তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করে না।”

তিনি বলেন, “ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বপরিসরে ইসলামের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষমতাকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করেছে।”

তিনি সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধকে আধুনিক ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এটি শুধু সামরিক সাফল্য নয়, বরং ইরানি জাতির ঈমান, আত্মত্যাগ ও দৃঢ়তার এক উজ্জ্বল প্রমাণ।”

কুরআনের আলোকে ইরানি জাতির অবস্থান
আয়াতুল্লাহ আরাকি বলেন, “কুরআনে আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইরানি জাতি সেই অঙ্গীকার রক্ষাকারীদের অন্যতম প্রমাণিত হয়েছে।”

তিনি কারবালার ঘটনা স্মরণ করে বলেন, “আহলুল বাইতের (আ.) সঙ্গে বায়াতের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাই আশূরার মতো মর্মন্তুদ অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। সেই ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—ঈশ্বরীয় নির্দেশনা থেকে বিচ্যুতি কী ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।”

গাজা সংকটে ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর নীরবতা: এক বিশ্বাসঘাতকতা
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে কিছু ইসলামি রাষ্ট্রের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আয়াতুল্লাহ আরাকি বলেন, “গাজার প্রতিবেশী কিছু ইসলামি দেশের নির্লিপ্ততা সত্যিই লজ্জাজনক। যখন নিরীহ শিশু ও নারী নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে, তখন এ ধরনের নীরবতা ইসলামি উম্মাহর সঙ্গে স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা।”

তিনি বলেন, “নিপীড়িতের পক্ষে দাঁড়ানো ইসলামি দায়িত্ব, যা শিয়া ও সুন্নি উভয় ধারায় প্রতিষ্ঠিত। এমনকি সুন্নি হাদিসে রয়েছে—রাসুল (সা.) সাহাবিদের থেকে সত্যের জন্য দাঁড়ানোর বায়াত নিয়েছিলেন। এটাই ছিল অভিভাবকত্বের প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি।”

ঈশ্বরীয় অভিভাবকত্ব: ঐক্য, ভালোবাসা ও বিজয়ের মূল ভিত্তি
তিনি বলেন, “আল্লাহ প্রথমে তাঁর প্রেমিক বান্দাদের ভালোবাসেন, এরপর তাঁদের নিজের পথে আহ্বান করেন। এই অভিভাবকত্ব থেকেই মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, সংহতি ও বিজয়ের শক্তি জন্ম নেয়"।

তিনি উল্লেখ করেন, “ইমাম আলী (আ.) ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি এই ঈশ্বরীয় অভিভাবকত্বের মর্যাদা অর্জন করেন — যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ খায়বার বিজয়।”

অভিভাবকত্বে ঐক্যবদ্ধ ইরানি জাতি
বক্তব্যের শেষে আয়াতুল্লাহ আরাকি বলেন, “আজকের ইরান এমন একটি জাতির প্রতিচ্ছবি, যারা আল্লাহর ভালোবাসা ও অভিভাবকত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের শহীদ, কমান্ডার, আলেম ও জনগণ — সবাই এই ঐশী পথের নিদর্শন।”

তিনি বলেন, “ইসলামের বিজয় এবং স্থায়িত্ব নির্ভর করে দুটি স্তম্ভের ওপর — আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর অভিভাবকত্বের প্রতি নিষ্ঠা।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha